রাজারহাটে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়ে এক গৃহবধূ মানসিক ভারসাম্যহীন


Buriganga News প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১৫, ২০২৩, ৫:০৮ অপরাহ্ন /
রাজারহাটে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়ে এক গৃহবধূ মানসিক ভারসাম্যহীন

নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজারহাটে দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার হয়ে এক গৃহবধূ মানসিক ভারসাম্যহীন

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে এক গৃহবধূকে দিনের পর দিন মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে মানসিক রোগী (পাগলী) করেছেন তার মাদকাসক্ত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিশ্বরতালুক গ্রামে। এলাকাবাসীর দাবী ভয়াবহ নির্যাতনের পাশাপাশি নানা গাছগাছড়ার ওষুধ খাইয়ে তাকে মানসিক রোগী (পাগলী) বানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, রাজারহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিশ্বরতালুক গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম (কেরানী) এর ছেলে মোঃ খোকন মিয়া (৩০) প্রায় ৮ বছর আগে সিলেট জেলার হবিগঞ্জ এলাকার ২ সন্তানের জননী মোছাঃ আছমা বেগম (২৫)কে ভালোবেসে বিয়ে করে তার বাড়িতে নিয়ে আসলে তার পিতা মোঃ রফিকুল ইসলাম ও পরিবারের লোকজন ওই পুত্রবধূকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে স্থানীয় গন্যমাণ্য ব্যাক্তিবর্গের অনুরোধে পুত্রবধূকে ঘরে তুলে নেন তার পিতা ও পরিবারের লোকজন। বিয়ের পর বেশ ভালোই চলছিল খোকন-আছমার সংসার। কিন্তু কয়েক বছর যেতেই তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ীর আসল রূপ ধরা পড়ে আছমার কাছে। পরে আছমার পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবী করেন,যৌতুকের টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি পড়ে যান চরম বিপাকে পূর্বের স্বামীকে তালাক দিয়ে ২ সন্তান রেখে চলে আসায় তার বাবার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার কোন পথ নেই, অপরদিকে স্বামী মোঃ খোকন মিয়ার নির্যাতন। তাই স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ীর নির্যাতন তাকে নিরবে সইতে হয়। যৌতুকের টাকা না দেয়ায় দিনের পর দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন অব্যাহত রাখে মোঃ খোকন মিয়া(৩০) ও তার বাবা-মা। এ ধারাবাহিক নির্যাতন সইতে না পেরে মোছাঃ আছমা বেগম (২৫) মারাত্মক অসুস্থ ও মানসিক রোগী (পাগলী) হয়ে পড়েছে। তাকে মানসিক রোগী (পাগলী) বানিয়ে তার শ্বশুর-শাশুড়ী ও পরিবারের লোকজন মোঃ খোকন মিয়া(৩০)কে তার ফুঁপাতো বোনের সঙ্গে দ্বীতিয় বিয়ে দেয়। বর্তমানে মোছাঃ আছমা (২৫) বেগম চিকিৎসা ছাড়াই অবহেলা,অযন্ত্রে একটি পরিত্যক্ত ঘরে বন্ধী জিবন-যাপন করছেন আর শুধুই চোখের জল ফেলছেন।
আছমার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আছমা মাদকাসক্ত মোঃ খোকন মিয়াকে বিয়ে করে চলে যাওয়ার পর তার বাবা-মা আমার কাছে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবী করে আসছিল। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে খাই এবং আছমার দুটি সন্তানকে খাওয়াই তাই জামাইয়ের যৌতুকের আবদার মেটাতে পারেননি। এ কারণে তারা আমার মেয়েকে নানাভাবে নির্যাতন করে মানসিক রোগী (পাগলী) বানিয়েছে। বর্তমানে আমার মেয়ে মরে গেছে এ কথা ভেবে শুধু বোবাকান্না আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বেঁচে আছি। আমি নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
অপরদিকে, আছমার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা নির্যাতনকারীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।ইউপি সদস্য মোঃ শহিদুল ইসলাম ব্যাপারী বলেন,আছমার ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও মোঃ খোকন মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন সেই সালিশের সিদ্ধান্ত মানেনি। এছাড়াও এ বিষয়ে কেউ বাড়াবাড়ি ও প্রতিবাদ করলে তাকে হত্যাসহ গ্রামছাড়া করার হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বলেন, আমরা নারী নির্যাতন ও সহিংসতা রোধে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আর আছমার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন এ বিষয়টি তদন্ত করা হবে। সত্যতা মিললে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজারহাট থানার ওসি মোঃ আব্দুল্লা হিল জামান সাংবাদিকদের বলেন , আছমার ওপর নির্যাতনের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
May be an image of 1 person

আমাদের ফেসবুক পেইজ