বুড়িগঙ্গা নিউজ ডেস্ক : ১০ বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে জয়পুরহাট শহরের পশ্চিম অঞ্চলের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য খনজনপুর এলাকায় নির্মিত ওভারহেড ট্যাংকটি। ওই ট্যাংকটির সঙ্গে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য লৌহদূরীকরণ প্ল্যান্ট নির্মাণ করার নির্দেশনা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ট্যাংকটি নির্মাণ করলেও সংশ্লিষ্টদের গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ওই প্ল্যান্টটি এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে ট্যাংকটি পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকায় ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে ভুতুড়ে পরিবেশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সুপেয় পানি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। দ্রুত ট্যাংকটি চালু করার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতিও খতিয়ে দেখতে হবে।
জয়পুরহাট পৌরসভা সূত্রে ও সরেজমিনে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৬ জুন মাঝারি শহরে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন (জিওবি-এডিবি) সেক্টর প্রকল্পের আওতায় জয়পুরহাট পৌরসভার খনজনপুর এলাকায় একই প্যাকেজে ওভারহেড ট্যাংক ও লৌহদূরীকরণ প্ল্যান্ট নির্মাণ শুরু করে জয়পুরহাট পৌরসভা। কিন্তু শুধুমাত্র ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ করলেও লৌহদূরীকরণ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়নি সেখানে। এ কারণে ওই ট্যাংক দিয়ে ১০ বছরেও চালু হয়নি সুপেয় পানি সরবরাহ।
প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ছিল ৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৯ টাকা। ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল কাজ বুঝিয়ে দিয়ে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বিল উত্তোলন করে নিয়েছে ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৬৬৩ টাকা। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ওই ট্যাংক দিয়ে এখনও চালু হয়নি পানি সরবরাহ। ভেতরে জরাজীর্ণ ভুতুড়ে পরিবেশ ও পরিত্যক্ত অকেজো হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ট্যাংকসহ ও অন্যান্য সরঞ্জামগুলো।
ট্যাংকটি বন্ধ থাকায় পূর্ব এলাকার ট্যাংক থেকে পানি সরবরাহ হচ্ছে। আর সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলেন, আমরা অবাক হয়েছি অনেকেই জানে যে, ট্যাংকটি চালু আছে। কিন্তু এই পানির ট্যাংকটি ১০-১২ বছর আগে তৈরির পর থেকে এখনও চালুই হয়নি, অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ট্যাংকটি কোনদিন চালু না হওয়ায় এখান থেকে সুপেয় পানির সুবিধা আমরা এলাকাবাসীরা পাইনি।
তারা আরও বলেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ট্যাংকটা নির্মাণ করেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এটি জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এখানে পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টটি নির্মাণ করা হয়নি। যেসব পাম্প বা অন্যান্য যন্ত্রপাতি ছিল সেগুলোও গায়েব হয়ে গেছে। এই ট্যাংক চালু না হওয়ায় এই এলাকায় শহরের সিও কলোনি ও বাসস্ট্যান্ডের অনেক দূরের ট্যাংক থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। অনেক সময় ঘোলা-নোংরা ও খাওয়ার অযোগ্য পানি আসে। তাই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে দ্রুত এই ট্যাংকটি চালু ও দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
জয়পুরহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর সাহেদুল ইসলাম সোহেল বলেন, সব কিছুই বরাদ্দ ছিল। কিন্তু বিগত সময়ে মেয়রের গাফিলতির কারণে ও দুর্নীতি করেছে দেখে ট্যাংকটি চালু হয়নি। যারা দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
জয়পুরহাট পৌরসভার প্যানেল মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস ঝর্ণা বলেন, আমি বারবার পৌরসভাতে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কেউ কোনো কর্ণপাত করেনি, সুরাহাও হয়নি। এখানে অবশ্যই দুর্নীতি করা হয়েছে, না হলে এতোদিনেও এটি চালু হবেনা কেন। জনগণের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতা আছে, আমরা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছি। আমি চাই এটা দ্রুত চালু করা হোক। এতে জনগনের উপকার হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি আবারও নতুন প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করবো।
জয়পুরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) খালেদুল হক বলেন, শুধু ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু লৌহদূরীকরণ প্ল্যান্ট করা হয়নি। এজন্য ওই ট্যাংক দিয়ে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ওই প্ল্যান্টটি নির্মাণ করলে ওই এলাকার অধিকসংখ্যক মানুষ পানি সরবরাহের সেবা পাবে ও রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
জয়পুরহাট পৌরসভার প্রশাসক ও উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার বিভাগ) সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, আমি সদ্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :