মতামত : আমাদের পাঁচ সদস্যের পরিবারের সঙ্গে ঘরে আশ্রয় নিয়েছে আরো কয়েকজন আত্মীয়। তাদের এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী বোমা ফেলার পর তারা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে। এখানে প্রায় চার দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। ফ্রিজের ভেতরে যা কিছু ছিল সব নষ্ট হয়ে গেছে।
সত্যি বলতে কি, আমরা ক্ষুধায় খুব কষ্ট পাচ্ছি।দিনে এক বেলা খাবার খাচ্ছি। যেটুকু খাবার ঘরে ছিল, তা-ও শেষ হওয়ার পথে। খাওয়ার পানিও একেবারে শেষ পর্যায়ে।
এটি শুধু আমার নয়, পুরো গাজার চিত্র।ঘরে ঘরে ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা বোমায় মানুষ মরছে। কিছু সময় পর পর বোমার শব্দ।
শিশুরাও রক্তাক্ত হচ্ছে। তাদের যখন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্সে করে, সেই অ্যাম্বুল্যান্সেও ইসরায়েল বোমা মারছে।
হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও নষ্ট হচ্ছে। কারণ বিদ্যুৎ নেই।
হাসপাতালের হিমঘরে থাকা মরদেহগুলো পচতে শুরু করেছে। পশ্চিমা বিশ্ব, পশ্চিমা গণমাধ্যম এগুলো দেখছে না। যে সাংবাদিকরা এসব ধ্বংসযজ্ঞ, করুণ দৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করছেন, তাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছেন। ইসরায়েল এসব দৃশ্য বিশ্বের কাছ থেকে আড়াল করতে চায়। এ জন্যই তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ চার্জ দিতে না পারলে একসময় সব মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর বাইরের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ থাকবে না। এককথায়, আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি।
বিশ্ব আমাদের সঙ্গে নেই—এ কথা আমরা বলব না। বলব, পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের সঙ্গে নেই। তারাই আমাদের সমস্যা জিইয়ে রেখেছে। আমাদের তিলে তিলে মারছে। এটি এক দিন, এক সপ্তাহ, এক মাস বা এক বছরের চিত্র নয়। যুগ যুগ ধরে চলছে।
লোকজন যখন আশ্রয়ের খোঁজে তুলনামূলক নিরাপদ এলাকার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তখনো তাদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়তই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ করছে। এবার তারা ঘোষণা দিচ্ছে, স্থল, নৌ ও আকাশপথে হামলা করবে। আমরা যেন গাজা ছেড়ে যাই। আমরা যাব কোথায়? এটি আমাদের মাতৃভূমি। আমাদের জন্ম এখানে। দখলদাররা আমাদের ভূখণ্ড ছেড়ে যেতে বলছে! এটা অবিশ্বাস্য! এবার ওরা আমাদের বাঁচার শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিতে চায়। আমাদের গাজার মানচিত্র থেকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে চায়।
হামজা ইব্রাহিম, শিক্ষক ও ফিলিস্তিনের গাজার বাসিন্দা।
জেনেভার একটি মানবাধিকার সংগঠনের সহযোগিতায় গাজার বাসিন্দা হামজা ইব্রাহিমের সঙ্গে কালের কণ্ঠ’র কথা হয় শনিবার রাতে। তখন তাঁর নাম ও ছবি প্রকাশের অনুমতি নেওয়া হয়। গতকাল রবিবার তাঁর সঙ্গে আবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জেনেভার মানবাধিকার সংগঠনটিও জানিয়েছে, হামজা ইব্রাহিমের সঙ্গে তাদেরও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :